অজয় বৈদ্য অন্তর:: সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ বলেছেন,সিলেটের কদমতলী মুক্তিযোদ্ধা চত্বর হচ্ছে অপরাধের আখরা। এখানে ভালো কোনো কাজ হয় না আবার নাম দেয়া হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা চত্বর। রোডস ডিপার্টমেন্ট রাস্তা ঘাট করেছে কিন্তু সিটি কর্পোরেশন মুক্তিযোদ্ধা চত্তর এর জন্য কিছুই করে নি। আমাদের সিলেটের মানুষ অত্যন্ত শান্তিপ্রিয় চাইলে অনেক কিছুই করতে পারতেন সিটি মেয়র সেদিকে কারো খেয়াল নেই বলে জানান তিনি।
আজ বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) শিশির ভেজা সকালে এক বিবৃতিতে তিনি একথা বলেন।
গোলাকার চত্বরের মধ্যে পানি জমে রয়েছে। ময়লা-আবর্জনার স্তূপে কয়েকটা ট্রাক, টেম্পো, মাইক্রোবাস ও যাত্রীবাহী বাস দাঁড়িয়ে আছে। এ দৃশ্য সিলেটের দক্ষিণ সুরমার কদমতলী এলাকায় অবস্থিত মুক্তিযোদ্ধা চত্বরের।
সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ বলেছেন, মেয়র আরিফ মুক্তিযোদ্ধের বিপক্ষের চিন্তা ধারা সে লক্ষ্যে কাজ করছেন। তিনি আরো বলেন, আরিফ সাহেব মুক্তিযোদ্ধ নিয়ে কিছু করার কথা নয়, কারণ তিনি মুক্তিযুদ্ধ পছন্দ করেন না, উনার কেউ মুক্তিযোদ্ধে যায় নি, এমনকি উনার পার্টিও মুক্তিযোদ্ধের পক্ষে কথা বলে না।
তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখহাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন সিলেটের উন্নয়নে টাকা ঠিকি দিচ্ছেন কিন্তু নাম করছেন মেয়র আরিফ। অথচ মেয়র আরিফের মুখ থেকে কখনো শুনা যায় না আওয়ামীলীগ সরকার যে সিলেটের উন্নয়নে টাকা দিচ্ছেন। কাজ করার জন্য সরকার মেয়রকে সহযোগিতা করছে অথচ তিনি একথা স্বীকারই করতে চান না।
তিনি বলেন, আমরা চলে যাবো কিন্তু যতোদিন দেশ থাকবে, যতোদিন সিলেট থাকবে ততোদিন থাকবে এ মুক্তিযোদ্ধা চত্বর তাই আজেবাজে কাজ বন্ধ করে কদমতলী চত্ত্বরটাকে যেনো সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে করা হয় এটাই চাই। তিনি যে দলেরই থাকেন মন যেনো জনগণের জন্য হয় এটাই চাই।
গত মঙ্গলবার (১১ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে বারোটার দিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, সেখানকার বেশ কিছু স্থানের ইট খসে পড়েছে। চত্বরের মধ্যে জমে থাকা পানি থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। চত্বরের ভেতরে দাঁড় করিয়ে রাখা একটি বাস ও ট্রাকের ভেতরে থাকা দুই ব্যক্তি গল্পগুজব করছেন। আর ট্রাকের ভেতরে থাকা ব্যক্তি বলেন, ‘সবাই রাখে। তাই চত্বরের ভেতরে আমিও ট্রাক রেখেছি। একটু পরই চলে যাব।’
এর আগে ১১ জানুয়ারি সিসিকের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আলী আকবর জানান, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সুষ্ঠ নেতৃত্বে আমরা সিলেট কে সুন্দরভাবে পরিচলনা করতে সক্ষম হচ্ছি। তিনি বলেন, আমরা যেহেতু রাস্তা বলে কাজ চালিয়েছি মূলত মনুমেন্ট অথ্যাৎ মুক্তিযোদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে নির্মিত। আমরা চাইছি ভালো আর্কিঠেকচার দিয়ে এটা তৈরী করতে। কারণ এটা স্বাভাবিক কোনো স্থাপনা নয়। যাতে করে এটা দেখে সবার হৃদয়ে একাত্তর তথা দেশ প্রেম লালন করতে পারে এমনি প্রক্রিয়ায় তৈরী করা হবে। আমরা বাছাই কাজ শেষ হলেই এর নির্মাণ কাজ শেষ করে দিবে।
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, দুই বছর আগে কদমতলী এলাকার মুক্তিযোদ্ধা চত্বর-সংলগ্ন সড়ক এবং সুরমা নদীর তীরে ওয়াকওয়ে নির্মাণের জন্য প্রায় ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এর ফলে সড়কের মধ্যে অবস্থিত মুক্তিযোদ্ধা চত্বরটি ভেঙে পরিসর আরও বাড়ানো হয়। এ কাজেরই অংশ হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা চত্বরে একটি দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা তৈরিরও সিদ্ধান্ত রয়েছে। এরই মধ্যে চত্বরের জন্য নকশা চেয়ে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তিও দেওয়া হয়েছিল। তবে জমা পড়া নকশা পছন্দ না হওয়ায় ফের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে।
২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্যানেল মেয়র ১ মোহাম্মদ তৌফিক বকস বলেন, সড়কের মধ্যে অবস্থিত মুক্তিযোদ্ধা চত্বরটি আরো সুন্দরভাবে নির্মাণ করার লক্ষ্যে আমরা ভেঙ্গে ফেলি। তিনি বলেন কাজ করার পূর্বে একটি কাজকে দীর্ঘ সময় এনালাইসেন্স করে কাজ শুরু করলে কাজটি সুন্দর হবে। চত্বরের জন্য নকশা চেয়ে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। নকশা পেলেই চত্বরের কাজ দ্রুত শুরু হবে। এবং আমরা অচিরেই অথ্যাৎ ২৬ মার্চের মধ্যেই দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা তৈরি করে ফেলবো।
কদমতলী এলাকার তরুণ ছেলে সবুজ মিয়া বলেন, মুক্তিযোদ্ধা চত্বর নামে স্থানটির পরিচিতি সিলেটজুড়েই রয়েছে। অথচ এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ চত্বর এভাবে অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকাটা দুঃখজনক। চত্বরের ভেতর নোংরা ও দুর্গন্ধময় হয়ে রয়েছে। এ ছাড়া স্থানটি দীর্ঘদিন ধরেই অস্থায়ী গাড়ি রাখার স্ট্যান্ডে পরিণত হয়েছে। চত্বরের পরিবেশ সুন্দর রাখতে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
স্থানীয় কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা জানান, মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকে অম্লান করে রাখতে মুক্তিযোদ্ধা চত্বর নির্মাণ করা হয়েছিল। এখানে চতুষ্কোণ একটি স্তম্ভ ছিল। তিন বছর আগে ওই এলাকার সড়কটি প্রশস্তকরণের জন্য সড়ক ও চত্বর ভেঙে নতুনভাবে নির্মাণকাজ শুরু করা হয়। চত্বরের পাশের সড়কটি নির্মাণ করা হলেও চত্বরের কাজ এখনো শেষ হয়নি। এরপর থেকেই স্থানটি অযত্ন-অবহেলায় পড়ে রয়েছে। এটা থেকে আমরা উপলদ্ধি করতে পেরেছি যে সিসিক মেয়র ইচ্ছে করেই গরিমসি করছেন। তিনি চান না মুক্তিযোদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত স্থানটুকু অতি তাড়াতাড়ি শেষ হোক। আর যদি চাইতেন তাহলে সিসিকের সকল কাজ বন্ধ করে হলেও সবার আগে মুক্তিযোদ্ধ চত্বরটিতে সর্বপ্রথম নজরে রাখতেন।
এবিএ/১৩ জানুয়ারি